বাবাকে কথা দিয়েছিলাম কখনো কোন সম্পর্কে জড়াবো না, তাই কোন এক বৃষ্টিস্নাত বিকেলে কাকভেজা হয়ে যে ছেলেটা একগুচ্ছ কদম হাতে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলো, তাকে ফিরিয়ে দিতে আমার এতটুকুন কষ্ট হয়নি। আমি অপেক্ষা করতাম আমার কল্পলোকের রাজপুত্তুরের জন্য।
একদিন শুনলাম আমার রাজযোটক পাওয়া গেছে। বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন,’খুব সুখী হবি তুই।’
আমি যে খুব সুখী হবো, সে আত্মবিশ্বাস আমারো ছিলো। আত্মীয়াদের মুখে আমার হবু বরের প্রশংসা শুনে অহংকারী চিত্তে ভাবতাম, এবার আমার পুঞ্জীভূত ভালোবাসা আকাশে ডানা মেলবে।
তারপর একদিন মহাসমারোহে আমি গাঁটছড়ায় বাঁধা পড়লাম। ভাবলাম, যে সুখ আমি চেয়েছিলাম তা পেয়েছি। আর কিছু চাই না।
একদিন বৃহস্পতিবার রাতে বরকে বললাম, ছাদে যাবে?
— কেন?
— আকাশ দেখবো।
— সে তো জানালা দিয়েই দেখা যায়।
— জানালা দিয়ে তো এক চিলতে আকাশ দেখা যায়, তোমার সাথে আজ আমি পুরো আকাশটাই ছোঁবো।
ও হো হো করে হেসে বলেছিলো,শুনেছি তুমি অনেক বই পড়ো। তুমি আকাশ,বৃষ্টি,জোছনা দেখে মুগ্ধ হবে সে স্বাভাবিক। কিন্তু আমার দৌড় তো টেক্সট বইয়ের সেই পদ্মা নদীর কুবের পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। ওসব আকাশ, বৃষ্টি দেখা আমার পোষায় না।
আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালন করা হয়েছিলো খুব ধুমধাম করে। আমার বান্ধবীরা পর্যন্ত সে অনুষ্ঠানে এসে আমার স্বামীভাগ্য নিয়ে ঈর্ষান্বিত হয়েছিলো। আমিও বেশ অবাক হয়েছিলাম আয়োজনের আতিসায্যে। ও সেদিন ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দিয়েছিলো আমার আঙুলে।
আমি সুখী। খুব সুখী। তবে রিংটার দিকে তাকিয়ে আমার আজকাল একগুচ্ছ কদম ফুলের কথাই বেশি মনে পড়ে।