এবার বাড়ি থেকে ফেরার সময় ট্রেনযাত্রার সঙ্গী হয়েছিলো যে মেয়েটি তার বয়স খুব বেশি হবে না।গ্রামের মেয়ে তবে, মেয়েটির আত্মবিশ্বাসী চোখ আর হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে ভালোই লাগছিলো। তাই নিজে থেকেই আলাপ শুরু করলাম।
-নাম কী তোমার?
-পিয়ালী।
-কোথায় যাবে?
-সোহাগী যামু আপা, শ্বশুরবাড়িতে।
তারপর পিয়ালীর সাথে কথা হলো অনেকক্ষণ। একটু চঞ্চল প্রকৃতির মেয়েটি ওর জীবনের সমস্ত ঘটনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বললো আমাকে।
পনেরো বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো পিয়ালীর। বিয়ের পরদিন থেকেই ওর উপর নেমে এসেছিলো অমানুষিক অত্যাচার। মদ্যপ স্বামী রোজ রাতেই মারতো ওকে। শাশুড়ির কাছে বিচার দিলে বলতো মাইয়া মানুষ হয়া জন্মাইছো, একটু আধটু মাইর তো খাইতেই হইবো।
তবে আত্মবিশ্বাসী পিয়ালী মুখ বুজে সহ্য করে নি। ছয়মাসের মাথায় পালিয়ে গিয়েছিলো পাশের বাড়ির এক বাড়ির মহিলার সাথে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ঢুকে পড়েছিলো।
দু’বছর পর সে আজ তার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ঐ নরকে ফিরছো কেনো?
পিয়ালী হেসে উত্তর দিলো, নরক না গো আপা। মাইয়া মানুষের জন্য ওইটাই স্বর্গ। অসুস্থ স্বামীর সেবা করা তো আমার দায়িত্ব।
-শুধু কি দায়িত্ব পালনের জন্য যাচ্ছো, ভালোবাসো না??
-অতো কঠিন কথা বুঝিনা আপা,তয় মানুষটার কথা সবসময় মনে পড়ে। বিয়ার পর আমারে একখান আলতা দিছিলো। দাঁড়ান দেখাইতাছি।
পিয়ালী হাসি মুখে আলতা খুঁজতে লাগলো। আর আমি ভাবতে লাগলাম ভালো থাকার জন্য বোধহয় আহ্নিক গতির আর ব্ল্যাকহোলের রহস্য জানার দরকার নেই। জগতে ভালো থাকাটাই বোধহয় সবচেয়ে সহজ ব্যাপার।